দেশে আজ যা ঘটল, তা অবশ্যম্ভাবী ছিল। গণ-অভ্যুত্থান কখনো ঠেকানো যায় না। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সহজেই সমাধান করা যেত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেদের কারণে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রাণহানির চিত্রের চেয়ে বাস্তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। আরও কত মরদেহ কোথায় পড়ে আছে, কত গণকবর হয়েছে, কত নিরীহ মানুষের প্রাণ ঝরেছে তা অজানা। শেখ হাসিনা তো চলে গেছেন, কিন্তু এই মৃত্যুর জবাব দেবে কে?
গত ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। দিনের পর দিন ভোট চুরি করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আজ ঘটেছে। শেখ হাসিনার বোঝা উচিত ছিল, তিনি ও তাঁর দল কতটা অজনপ্রিয়। এত প্রাণহানির জবাব দেবে কে? দেশে সুশাসনের অভাব ছিল। তিনি সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হাজার হাজার গুলি ছোড়া হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানো হয়েছে।
এর আগে আমরা এইচ এম এরশাদকে স্বৈরাচার বলেছি। মাত্র ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনায় তাঁকে স্বৈরশাসক বলেছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে কত মানুষের প্রাণ ঝরেছে?
২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। এর জবাব দেবে কে?
জাতির পিতার পরিবারের এত করুণ পরিণতি কেন হবে? এসব হয়েছে শেখ হাসিনার দম্ভ ও অহমিকার কারণে।
প্রধানমন্ত্রীকে বারবার বলেছি, দেশে সুশাসন নিশ্চিত করেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলেছি। কিন্তু যা ঘটেছে, তা স্বৈরতন্ত্র। এসব বলার কারণে আমাদের ভিন্ন দলের এজেন্ট বলা হতো। গণভবন লুটপাট, ভাঙচুরের জন্য জনগণকে দোষ দেবেন কীভাবে?
শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া ও মিসর থেকে শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষা নেয়নি। জনগণের সরকার না হলে এমন পরিণতি হয়।
এরশাদের চেয়ে শেখ হাসিনা ১০০ গুণ বেশি খারাপ হয়ে বিদায় নিয়েছেন। এরশাদ পালিয়ে যাননি, কিন্তু তিনি পালিয়ে গেছেন। তিনি পালিয়ে গেছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিয়ে গেলেন। তাঁর হিংসা, দম্ভ, অহংকার দলটাকে ধ্বংস করল।
এম সাখাওয়াত হোসেন
নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা
0 Comments