Header Ads Widget

হেফাজতের নামে ছয় সমন্বয়ককে আটকে রাখা নিয়ে প্রশ্ন

                                                                       


ডিবি হেফাজতে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে রোববার প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এভাবে দেখা যায় [ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া]


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক এখনো ডিবি হেফাজতে

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজত থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক এখনো মুক্তি পাননি। তাঁদের এমনভাবে 'হেফাজতে' রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত সোমবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত, এই ছয় শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা ডিবি কার্যালয়ে অপেক্ষা করেও সন্তানদের নিয়ে যেতে পারেননি।


আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, নিরাপত্তা হেফাজতের নামে এই ছয়জনকে কার্যত আটকে রাখা হয়েছে। এভাবে কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখা বেআইনি। শিক্ষার্থীদের পরিবারও জানাচ্ছে, তাঁরা কোনো নিরাপত্তাহীনতার কথা পুলিশকে জানাননি এবং কোনো নিরাপত্তাও চাননি।


আইনি ভিত্তি ছাড়াই এমন একটি হেফাজতের কাহিনি তৈরি করা হলো, যা সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। — মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে প্রথমে তিনজনকে গত শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে আনা হয়। তাঁরা হলেন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের। নাহিদ ও আসিফ সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং বাকের তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। এরপর, শনিবার সন্ধ্যায় সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে ডিবি নিয়ে আসে। রোববার ভোরে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে নুসরাত তাবাসসুমকে তুলে আনা হয়। এরপর তাঁরা মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আছেন। ডিবির দাবি, তাঁদের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

ডিবি প্রধানের বক্তব্য ডিবির প্রধান, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিরাপত্তা ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের ডিবি হেফাজতে আনা হয়েছে। তাঁরা ভালো আছেন।’

কিন্তু এভাবে কাউকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়ার নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটকে রাখতে পারে কি না, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে কাউকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়ার কোনো বিধান দেশের কোনো আইনে নেই। যেভাবে ছয়জনকে আটক করে রাখা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি।


শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক দুই থেকে চার দিন ডিবি হেফাজতে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাঁদের মুক্তির দাবি করছে। তাঁদের মুক্তির বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিটও হয়েছে। সন্তানদের মুক্তির আশায় গত সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন ছয় শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা।


ডিবি প্রধানের ফেসবুক পোস্ট ডিবি কার্যালয়ে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ থেকে গত রোববার এই ছয় সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলেন। এরপর ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন, যেখানে ছয় সমন্বয়কের সঙ্গে এক টেবিলে খাবার খেতে দেখা যায়।


উচ্চ আদালতের মন্তব্য উচ্চ আদালত এই ঘটনাকে ‘জাতির সঙ্গে মশকরা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। আদালত বলেন, ‘জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না। যাকে নেন ধরে, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।’


উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু আদালতে এ নিয়ে রিট হয়েছে, আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে, ডিবি সেটা অনুসরণ করবে।


শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১২ জনের একটি প্রতিনিধিদল এই শিক্ষার্থীদের খোঁজে ডিবি কার্যালয়ে যান; কিন্তু তারা ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে হেফাজতে রাখার প্রক্রিয়াটি খুবই কৌতূহলোদ্দীপক। আইনি ভিত্তি ছাড়াই এমন একটি হেফাজতের কাহিনি তৈরি করা হলো, যা সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম।

Post a Comment

0 Comments