Header Ads Widget

ঢাকায় গ্রেপ্তার ৮৭ শতাংশের রাজনৈতিক পরিচয় নেই


 

ডিএমপির তথ্য (সোমবার পর্যন্ত)

    • ২৪৩ মামলায় গ্রেপ্তার ২,৬৩০।

    • ২,২৮৪ জনের রাজনৈতিক পরিচয় নেই।

    • বিএনপির নেতা-কর্মী ২৬৯ জন।

    • জামায়াত ও শিবিরের ৭৩ জন।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, তাঁরা কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করছেন না। তিনি গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য, ভিডিও ফুটেজ এবং সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যাদের শনাক্ত করা গেছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ভুলক্রমে কেউ গ্রেপ্তার হলে, থানায় যাচাইয়ের পর নিরপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজেই গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না।


ঢাকার আদালত সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকায় ২৭০টি মামলায় ২ হাজার ৮৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হিসাব অনুযায়ী, গত সোমবার পর্যন্ত রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ২৪৩টি মামলায় মোট ২ হাজার ৬৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৮৪ জনের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি, যা মোট গ্রেপ্তারের ৮৬.৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো দলের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ।


গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী ২৬৯ জন, জামায়াতের ৬৩ জন এবং শিবিরের ১০ জন। এছাড়া গণ অধিকার পরিষদের ৩ জন এবং জেপির ১ জন রয়েছে, যা মোট গ্রেপ্তারের ১৩.১৬ শতাংশ।


সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, "বিভিন্ন সংকটের সময় গ্রেপ্তার বাণিজ্যের কথা শুনেছি। এখন মহাসংকট চলছে। এই সময়ে কে, কখন, কাকে গ্রেপ্তার করল, সেটার তদারকি না থাকলে সমস্যা হবে।"


কোটা আন্দোলনকালে সহিংসতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার কথা সরকার ও পুলিশ বারবার বললেও এত বেশি সংখ্যায় সাধারণ মানুষ কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে? এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে সহিংসতা বা অপরাধে জড়ানোর প্রমাণ নেই, এমন কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানি না হয়। এ বিষয়গুলো আমরা কঠোরভাবে তদারকি করছি। তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’


**গ্রেপ্তার হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ ও পথচারী**


উবারে মোটরসাইকেল চালান মোহাম্মদ হাসান। গত শুক্রবার সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে ইব্রাহিমপুরের বাসা থেকে বের হওয়ার পর তিনি নিখোঁজ হন। তাঁর খোঁজে গত সোমবার বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন স্ত্রী নাজমা আক্তার ও শাশুড়ি মার্জিয়া বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মার্জিয়া বলেন, ‘ছেলেটার বাবা-মা জীবিত নেই। অসহায়, এতিম। তাকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। সে কিছু করেনি। তাকে আন্দাজে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে।’


কুলসুমা বেগম নামের এক নারী জানান, তাঁর ছেলে আল-আমিন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) পড়াশোনা করতেন। বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করার উদ্দেশ্যে গত রোববার বাসা থেকে বের হন। উত্তরার আজমপুর এলাকায় রাজউক কলেজের সামনে পুলিশ তাঁকে আটক করে মুঠোফোন তল্লাশি করে কোটা আন্দোলনের কিছু ছবি পায়। পুলিশ তাঁকে উত্তরা পূর্ব থানায় নিয়ে মারধর করে। রাতে তাঁর মা খবর পেয়ে থানায় গেলে বলা হয়, তাঁর ছেলেকে ডিবিতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিবি ছেলের কোনো তথ্য দিচ্ছে না।


গত সোমবার বিকেলে ডিবি কার্যালয়ের সামনে বিলাপ করছিলেন ১৮ বছরের তরুণ আল-আমিনের বাবা-মা। বাবা চান মিয়া বলেন, তাঁর ছেলে এসির দোকানে কাজ করেন। পুলিশ গত সোমবার তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে। একনজর দেখার আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে প্রশাসনের হেফাজতে আছে নাকি তাকে কেউ গুম করেছে, এটা জানতে চাই।’


মোবাশ্বের আহমেদ নামের এক ব্যক্তিকে খুঁজতে গত সোমবার বিকেলে ডিবি ফটকে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কাঁটাবন মসজিদের এতিমখানা ও মাদ্রাসার শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে এতিমখানার আরেক শিক্ষক শফিক আহমেদকেও পুলিশ তুলে নিয়ে এসেছে। শুনেছি তাঁরা ডিবি কার্যালয়ে আছেন। কিন্তু পুলিশ স্বীকার করছে না।’


মোবাশ্বের আহমেদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন জানিয়ে তাঁর স্ত্রী বলেন, বিনা কারণে তাঁর স্বামীকে ধরে নিয়ে এসেছে।


Post a Comment

0 Comments