কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে গত ২৩ দিনে ঢাকায় ২৮৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ২ হাজার জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ১২ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এসব মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় অন্তত ৩ হাজার ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে, তাঁদের জামিন পাওয়া বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
মামলাগুলোর মধ্যে ৬১টি মামলায় নাম উল্লেখ করে ১ হাজার ৯৮৩ জনকে আসামি করা হয়েছে, এবং ১২৩টি মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে—৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪১৭। এর বাইরে, ১০২টি মামলায় কোনো আসামির নাম বা সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি, শুধুমাত্র অজ্ঞাত আসামির উল্লেখ রয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হামলা, সংঘর্ষ এবং গুলিতে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ২১৩ জন নিহত হয়েছেন। ঢাকায় ৬৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় এবং প্রথম হামলা ঘটে ১৫ জুলাই। এরপর আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে যে, শিক্ষার্থীরা নয়, বিএনপি-জামায়াতের লোকজন এই আন্দোলন চালাচ্ছে। তবে, মামলাগুলোর এজাহারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আসামি করা হয়েছে, যা ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণের পর, এসব মামলাগুলোর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রথম আলোকে জানিয়েছেন যে, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়ের করা মামলাগুলো তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকায়, বাড্ডা থানায় ১১টি মামলায় সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গুলশান থানায় ৬টি মামলায় ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার জন এবং ভাটারা থানায় ৪টি মামলায় ৩ হাজার থেকে ১২ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের পুলিশ সদস্যরা বর্তমানে মামলাগুলোর প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, নির্দেশনা অনুযায়ী তারা মামলাগুলোর প্রত্যাহার শুরু করেছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে গতকালের হিসাব অনুযায়ী, ২৮৬টি মামলার মধ্যে ২৪৩টিতে গ্রেপ্তারকৃত ২ হাজার ৬৩০ জনের রাজনৈতিক অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৮৪ জনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি, যা মোট গ্রেপ্তারের ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। বাকি গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী ছিলেন ২৬৯ জন, জামায়াতের ৬৩ জন এবং শিবিরের ১০ জন। গণ অধিকার পরিষদের ৩ জন এবং জেপির ১ জনও গ্রেপ্তার হন, যা মোট গ্রেপ্তারের ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। যদিও বেশিরভাগ গ্রেপ্তারকৃত বর্তমানে জামিনে আছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেছেন, পুলিশ এবং ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা বিরোধীদের দমন এবং ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এই মামলাগুলোও অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসব মামলার প্রশাসনিক তদন্ত হওয়া উচিত এবং সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলাগুলোর খারিজের আবেদন করা হলে সেগুলো খারিজ হয়ে যেতে পারে।
ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ নিয়ে সরকারের গঠিত সার্চ কমিটি, এবং অন্যান্য আইন ও নীতির বিষয়েও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক মন্তব্য করেছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, বিষয়টির তদন্ত এবং সামগ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
0 Comments