ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার নামে বিসিবির দীর্ঘকালীন অপব্যবহার
ক্রিকেটের প্রাণ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বহু বছর ধরে এক ধরনের ধুঁকছে। কল্পনা করুন, ক্রিকেট যদি কথা বলতে পারত, সে হয়তো বলত, “আপনাদের অতি ভালোবাসার উত্তাপে আমি পুড়ে ছাই হচ্ছি। দয়া করে আমাকে মুক্তি দিন।”
ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকেরা দেশের ক্রিকেটকে এতকাল ধরে নিজেদের ভালোবাসার জালে আটকে রেখেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হঠাৎ করে তাদের বেশিরভাগই দৃশ্যপট থেকে উধাও হয়ে গেছেন। এমনকি বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসানও দেশান্তরি হয়ে গেছেন বলে খবর রয়েছে। ‘ভালোবাসা’র প্রতি কারও কোনো দায়বদ্ধতা নেই!
গত এক যুগ ধরে নাজমুল হাসান এবং তার সহযোগীদের ‘ভালোবাসার’ চাপের কারণে ক্রিকেটের অপব্যবহার ও দুর্নীতি বেড়ে গেছে। ঘরোয়া ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে পড়েছে।
২০১২ সালে প্রথম বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার পর, আইসিসির বাধ্যবাধকতার কারণে ২০১৩ সালে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন নাজমুল হাসান। তারপরের বছরগুলোতে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন এবং এখনও বিসিবির সভাপতি।
কিন্তু, বিসিবির নির্বাচনের প্রক্রিয়া এমনভাবে সাজানো থাকে যে নির্বাচিত পরিচালকদের অধিকাংশই সমমনা হন। যেহেতু নাজমুল হাসান শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ, তাই তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস কেউ কল্পনাও করেনি। তার একচ্ছত্র আধিপত্য দেশের ক্রিকেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট, যা দেশের ক্রিকেটের ভিত্তি, ১২ বছর ধরে ধ্বংসের দিকে চলে গেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বিপিএল পেশাদার কাঠামো পায়নি এবং ঢাকা লিগকে বিসিবির ভোটের রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
২০১৪ সালে তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ফি ১ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়, যার ফলে অনেক একাডেমি দল আর অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এর ফলে, উঠতি ক্রিকেটারদের প্রতিযোগিতামূলক সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে।
এছাড়া, সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের নিবন্ধন ছাড়া কোনো একাডেমি তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে অংশ নিতে পারবে না—এমন নিয়মও চালু করা হয়েছে। এর ফলে অনেক উঠতি ক্রিকেটার সুযোগ না পেয়ে হারিয়ে গেছে।
বিসিবির ভোটের রাজনীতি এখনও চলছে। বোর্ডের নির্বাচনে ঢাকার ক্লাবগুলো ভোটের রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু, যা ‘ভালোবাসার’ ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নাজমুল হাসান ও তার বোর্ডের একচ্ছত্র আধিপত্য ঢাকার ক্রিকেটে পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং এবং পাতানো ম্যাচের মতো সমস্যা সৃষ্টি করেছে। মাঠে ক্রিকেটাররা যতই খেলুন না কেন, মাঠের বাইরে তাদের দিয়ে চলেছে ক্ষমতার খেলা।
0 Comments